What is Islamophobia?
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বিশ্ব কাপানো বক্তব্যের বাংলা অনুবাদ।
আমার তৃতীয় পয়েন্টটি ইসলামফোবিয়া সম্পর্কে। বর্তমান বিশ্বে মুসলমানদের সংখ্যা ১ দশমিক ৩ বিলিয়ন। পৃথবীর সবক’টি মহাদেশেই মুসলমানদের বসবাস। নাইন ইলেভেনের পর থেকে আশঙ্কাজনকভাবে ইসলামফোবিয়া বৃদ্ধি পেয়েছে। এই বৃদ্ধিটা উদ্বেগজনকও বটে। শুধু উদ্বেগজনকই নয়, এটাই মূলত বিভাজন সৃষ্টি করেছে। আশ্চর্যজনক ব্যাপার, মুসলিম মহিলাদের সাধারণ হিজাব বা বোরকা পরাটাও আজ একটি সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে! সাধারণ হিজাবকেও অস্ত্রের দৃষ্টিতে দেখা হচ্ছে।
কোনও কোনও দেশের কিছু ভদ্র মহিলারা তাদের গায়ের পোশাক খুলে ফেলতে পারেন, তাই বলে কি আর কেউ পোশাক পরতে পারেন না! আর কেনই বা এমন হচ্ছে? কারণ, কিছু পশ্চিমা লিডার ইসলামকে সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে এক করে নিয়েছেন।
উগ্রবাদী ইসলাম (Radical Islam) আবার কী? ইসলাম তো একটাই। আর সেটা হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ইসলাম। সেখানে আবার ইসলামফোবিয়া কেন? আমার জানতে ইচ্ছে করে, একজন আমেরিকান কীভাবে র্যা ডিক্যাল মুসলিম ও মোডারেট মুসলিম বলে মুসলমানদেরকে ভাগ করতে পারে! আমাদের ধর্মে মোটেই এসবের কোনও সম্পর্ক নেই। বিদেশ ভ্রমণের সময় আমরা ইসলামফোবিয়ার মুখোমুখি হয়েছি। ইসলামফোবিয়া ইউরোপিয় দেশগুলোতে মুসলমানদেরকে কোনঠাসা করে ফেলেছে। আর এ পরিস্থিতি উগ্রবাদের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।
আমার বক্তব্য হলো, আমাদেরকে অবশ্য এ সমস্যার সমাধান করতে হবে। নাইন ইলেভেনর পর র্যা ডিক্যাল ইসলামের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু হয়। মুসলিম নেতৃবৃন্দ পশ্চিমা নেতাদের বার বার বুঝানোর চেষ্টা করেছেন যে, র্যা ডিক্যাল ইসলাম বলে আদৌ কিছু নেই।
সব সমাজেই কট্ররপন্থী রয়েছে। কিন্তু করুণা ও ন্যায়বিচার সব ধর্মের মূল কথা। দুর্ভাগ্যবশত আমাদের মুসলিম নেতৃবৃন্দ এ ব্যাখ্যা প্রদানে ব্যর্থ হয়েছেন। আমরা মুসলিম বিশ্বকেও ব্যাখ্যা করতে ব্যর্থ হয়েছি যে র্যা ডিক্যাল ইসলাম বলে কিছু নেই। একসময় পাকিস্তানে আমরা ঝড়ের কবলে ছিলাম এবং আমাদের সরকার enlightened moderation নামে একটি স্লোগান তৈরি করেছিলেন।
যেহেতু নাইন ইলেভেনের হামলাকারীরা আত্মঘাতী ছিল, সঙ্গত কারণে আত্মঘাতী হামলা সম্পর্কেও একটু বলা দরকার। নাইন ইলেভেনের ব্যাপারটি ছিল অনেকটা স্বর্গী কুমারীর মতো। নাইন ইলেভেনের এই উদ্ভট ঘটনাটি ঘটেছিল আত্মঘাতী হামলার ইসলামিকরণের জন্যে। তামিল টাইগার আর জাপানের কামিকাজে বোমারু নিয়ে কারও কোনও মাথাব্যথা নেই। তারা যখন আত্মঘাতী হামলা করে, তখন আর কেউ ধর্মকে দোষে না। হ্যা, এটা সত্য যে, কোনও ধর্মই সহিংসতার শিক্ষা দেয় না।
পশ্চিমাদের ইসলামফোবিয়ার কারণ সম্পর্কে আমার ব্যাক্তিগত অভিজ্ঞতা ও অনুসন্ধান আছে। আমি পশ্চিমের দেশগুলোতে দীর্ঘ সময় কাটিয়েছি ক্রিকেট খেলে। পশ্চিমাদের মন-মানস কীভাবে কাজ করে, তা আমি ভালো করে জানি। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কথাটি হলো, ইসলামফোবিয়ার অন্যতম কারণ ১৯৮৯ সালে প্রকাশিত সেই বই। যেখানে জঘন্য ভাষায় নবি করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ব্যাঙ্গ-বিদ্রুপ করা হয়েছিল।
পশ্চিমারা আসল সমস্যা বুঝতে পারলেন না। কেননা, ইসলাম সম্পর্কে তাদের গভীর অনুধাবন নেই। ইসলামের শান্তি-সম্প্রীতি ও ভ্রাতৃত্ব সম্পর্কে তারা ওয়াকিবহাল নয়। তাই ইসলাম তাদের কাছে একটি উগ্র, সাম্প্রদায়িক ও মারমুখো অসহিষ্ণু ধর্মের নাম।
দুই-তিন বছর পর পর কেউ একজন নবি করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে নিয়ে ব্যাঙ্গ-বিদ্রুপ করেন আর আমরা মুসলমানরা আমাদের দায়িত্ববোধ থেকে শান্তিপূর্ণভাবে এর ন্যায়সঙ্গত প্রতিবাদ করি। এ প্রতিবাদই আবার পশ্চিমাদের কাছে হয়ে উঠে উগ্রবাদ, অসহিষ্ণুতা! এটাই মুসলমানদের কপাল!
পশ্চিমের সবাই খারাপ অথবা সবাই ভালো এটা বলা যাবে না। খারাপের সংখ্যা নেহায়েত সামান্য। এই সামান্য সংখ্যক খারাপ লোকই মুসলমানদের উস্কে দেওয়ার জন্যে দায়ী। আমি তাদেরকেই দায়ী করবো।
আমাদের মহানবি হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন একজন আদর্শ মানব, মহাগ্রন্থ আল-কুরআনের বাস্তব নমুনা। আমরা কেবল তাঁর আদর্শে বেঁচে থাকতে চাই। রাসুল মদিনায় রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। যাকে বলে কল্যাণমূলক রাষ্ট্র।
আমি সবসময় এ বিষয় নিয়ে ভাবতাম যে, কখনও যদি আমার এমন পরিবেশে কথা বলার সুযোগ হয়, তখন আমি ইসলাম সম্পর্কে বিশ্বকে এ বার্তাটিই দেব।
পশ্চিমা সমাজে হলোকাস্টকে অত্যন্ত সংবেদনশীলতার সঙ্গে বিবেচনা করা হয়। কেন না, এর অবমাননা ইহুদি সম্প্রদায়কে আঘাত করে। আমরা আমাদের নবির ক্ষেত্রেও একই শ্রদ্ধার আবেদন করি। দয়াকরে আমাদের নবিকে কটাক্ষ করে আমাদের অনুভূতিতে আঘাত করবেন না। এটাই আমাদের অনুরোধ।