Photographic Exhibition of Nasir Ali Mamun
শৈল্পিক ফটোশিল্পী নাসির আলী মামুন। ক্যামেরার ফ্রেমে যা বন্দি করেন সেটাই যেন শিল্প হয়ে ওঠে। নিখুঁত কারুকাজে তার ছবি যেন কথা বলে। ফটোশিল্পের ভুবনে তিনি এক জীবন্ত কিংবদন্তি। খ্যাতিমান এই আলোকচিত্রীর ছবি নিয়ে জাদুঘরে শুরু হয়েছে ‘ফটোজিয়াম’ শীর্ষক আলোকচিত্র প্রদর্শনী।
আলোকচিত্র প্রদর্শনী
৩ মে ২০১৮ পর্যন্ত এ প্রদর্শনী চলবে। ১২৩টি সাদাকালো পোর্ট্রেট আলোকচিত্র দিয়ে সাজানো হয়েছে ২৪ দিনের এই প্রদর্শনী। শনি থেকে বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে রাত ৮টা এবং শুক্রবার দুপুর আড়াইটা থেকে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত প্রদর্শনীটি সবার জন্য উন্মুক্ত।
শিল্পী নাসির আলী মামুনের এটা ৫৭তম প্রদর্শনী। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের খ্যাতিমানদের সাদা-কালো ছবি এতে প্রদর্শিত হবে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, ভাষাসৈনিক আবদুল মতিন, গাজীউল হক, মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক আতাউল গনি ওসমানী, মাদার তেরেসাসহ বিশিষ্টজনদের পোর্ট্রেট স্থান পেয়েছে এই ক্যামেরাশিল্পীর আলোকচিত্রে।
অতিথি
জাদুঘরের নলিনীকান্ত ভট্টশালী গ্যালারিতে এ প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন ইমেরিটাস প্রফেসর ড. আনিসুজ্জামান।
এতে প্রধান অতিথি ছিলেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর।
অতিথি ছিলেন দৈনিক প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান, বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান আবুল খায়ের।
সভাপতিত্ব করেন জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক ফয়জুল লতিফ চৌধুরী।
বক্তাদের বক্তব্য
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, নাসির আলী মামুন দেশের শ্রেষ্ঠ পোট্রেট আলোকচিত্রশিল্পীদের মধ্যে অন্যতম। তিনি সৃষ্টিশীল এবং খ্যাতিমান ব্যক্তিত্বদের বিভিন্ন দুর্লভ মুহূর্ত তার ক্যামেরায় বন্দী করে চলেছেন পরম মমতায়।
আর্টকন-এর সার্বিক সহযোগিতায় আয়োজিত এ প্রদর্শনীটি জাতীয় অধ্যাপক আবদুর রাজ্জাককে উৎসর্গ করা হয়েছে।
অধ্যাপক আনিস্জ্জুামান বলেন, ‘আমার মতে, যেকোনো রঙিন ছবির চেয়ে সাদা-কালো ছবির স্থায়িত্ব বেশি। মামুনের ১২৩টি সাদা-কালো আলোকচিত্রে যারা উঠে এসেছেন, তাদের মুখাবয়বে চারিত্রিক ও পেশাগত বৈশিষ্ট্যের আভাস মিলে। প্রতিটি ছবি শৈল্পিক সুষমামণ্ডিত। এখানেই মামুনের কৃতিত্ব, যেকোনো মানদণ্ডে মামুনকে বড় মাপের শিল্পী বলা যায়।’
আসাদুজ্জামান নূর বলেন, ‘মামুনকে আমি পাগলই বলব! মামুন সারা জীবনভর তার ক্যামেরার মাধ্যমে মানুষের জীবনের গল্প বলে গেছে। ক্যামেরার সাথেই গোটা জীবন কেটেছে তার।’
প্রদর্শনী নিয়ে নাসির আলী মামুন জানান, এটি তার ৫৭তম একক আলোকচিত্র প্রদর্শনী। প্রদর্শনীতে এমন অনেক ছবি রয়েছে, যেগুলো আগে কোথাও প্রকাশিত হয়নি।
প্রদর্শনীতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বেশকটি আলোকচিত্র ঠাঁই পেয়েছে। ১৯৭১ সালের শুরুর দিকে পাকিস্তানি সামরিক জান্তার হামলায় নিহতদের স্মরণে ৩ মার্চ পল্টন ময়দানে এক শোকসভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে মোনাজাত পরিচালনা করেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। মোনাজাতরত অবস্থায় বঙ্গবন্ধুর ছবি তুলেছিলেন মামুন। সেই ছবি ঠাঁই পেয়েছে এই প্রদর্শনীতে। এছাড়াও ১৯৭৩ সালের সেপ্টেম্বরে তোলা বঙ্গবন্ধুর একটি হাস্যোজ্জ্বল প্রতিকৃতিও ঠাঁই পেয়েছে এই প্রদর্শনীতে, যা আগে প্রদর্শন করেননি মামুন।
আলোকচিত্রে উঠে এসেছে
প্রদর্শনীতে রয়েছে মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর হাস্যোজ্জ্বল একটি ছবি, রয়েছে বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিষ্ঠাতা কমরেড মনি সিংহ, মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সেনাপতি এম এ জি ওসমানীর ছবি রয়েছে এখানে।
ভাষা আন্দোলন, সংগ্রামের প্রেক্ষাপটে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখা ভাষাসৈনিক আব্দুল মতিন ও ভাষা সংগ্রামী গাজিউল হকের ছবির পাশাপাশি রয়েছে বাংলার কবি ও কথাসাহিত্যিকদের আলোকচিত্র।
১৯৭৩ সালে কবি কাজী নজরুল ইসলামের একটি প্রতিকৃতি ঠাঁই পেয়েছে এখানে।
আলোকচিত্রে উঠে এসেছে কবি সুফিয়া কামাল, জসীমউদদীন, আহসান হাবীব, শামসুর রাহমান, সৈয়দ শামসুল হক, কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, হুমায়ূন আহমেদ, হুমায়ূন আজাদ, আহমেদ ছফার বিভিন্ন মুহূর্ত। রয়েছে ‘শিল্পাচার্য’ জয়নুল আবেদিন, ‘পটুয়া’ কামরুল হাসান, শিল্পী এস এম সুলতানের ছবি।
বিজ্ঞানী কাজী মোতাহার হোসেন ও এমিরেটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের ছবিও রয়েছে প্রদর্শনীর এক কোণে। দেখা গেল শাহ আবদুল করিমের একটি প্রতিকৃতি।
প্রদর্শনীতে ঠাঁই পেয়েছে মাদার তেরেসার ধ্যানস্থ মুখের পাশে ঢাকা সফরে আসা নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অর্মত্য সেন, নোবেলজয়ী কবি-সাহিত্যিক গুন্টার গ্রাসের ছবি।
২০০৯ সালে যুক্তরাষ্ট্র সফরে গিয়ে হোয়াইট হাউজে নাসির আলী মামুন তুলেছেন স্টিফেন হকিংয়ের ছবি।
প্রদর্শনীতে সংগীত জগতের তারকাদের মধ্যে সানাইবাদক ওস্তাদ বিসমিল্লাহ্ খান, পণ্ডিত রবিশঙ্কর, হরিপ্রসাদ চৌরাসিয়া, ওস্তাদ আমজাদ আলী খান, ওস্তাদ গুল মোহাম্মদ খান, তবলা মায়েস্ত্রো জাকির হোসেন ও আল্লারাখার নানা মুহূর্ত ও পারফরম্যান্সের ছবিও ঠাঁই পেয়েছে।
রয়েছে চলচ্চিত্রকার মৃণাল সেন, আলমগীর কবীর, অভিনেতা হুমায়ূন ফরিদী, আসাদুজ্জামান নূর, ফেরদৌসী মজুমদার ও রামেন্দু মজুমদারের ছবি।
প্রদর্শনীতে রয়েছে সাংস্কৃতিক সংগঠক সনজীদা খাতুনের প্রতিকৃতিও।