National Sculpture Exhibition in Dhaka Bangladesh
জাতীয় চিত্রশালার তৃতীয়তলা। সেখানে গ্যালারি দুই ও তিনসহ পুরো জায়গায় এক নান্দনিক শোভা। চারিদিকে ছড়িয়ে আছে নানা আঙ্গিকের নানা উপকরণে তৈরি ভাস্বর্য। দেখলে মনে হয় এ বুঝি শিল্পশোভিত এক বাগান। যেখানে ফুটে আছে শিল্পীর ভাবনার প্রকাশগুলো। নবীন-প্রবীণ শিল্পীদের পাশাপাশি স্থান পেয়েছে দেশের পথিকৃত ও আমন্ত্রিত শিল্পীদের ভাস্কর্য শিল্পকর্মও। এমনই সম্ভার নিয়ে শুরু হয়েছে চতুর্থ জাতীয় ভাস্কর্য প্রদর্শনী।
জাতীয় ভাস্কর্য প্রদর্শনী
৭ মে বুধবার ছিল ‘জাতীয় ভাস্কর্য প্রদর্শনী-২০১৮’-এর উদ্বোধনী আয়োজন। এদিন শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালা মিলনায়তনে বিকালে প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকীর সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন সংস্কৃতি সচিব নাসির উদ্দিন আহমেদ এবং বরেণ্য ভাস্কর হামিদুজ্জামান খান। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন একাডেমির চারুকলা বিভাগের পরিচালক আশরাফুল আলম পপলু। জমকালো আয়োজনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় উদ্বোধনী আনুষ্ঠানিকতা। মঞ্চের সামনে একদল যন্ত্রশিল্পী শুরুতে পরিবেশন করে বেশকিছু জনপ্রিয় গান। সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর বলেন, ‘পৃথিবীর অধিকাংশ দেশেই ভাস্কর্য চর্চায় অনেক গুরুত্ব দেয়া হয়। কেননা ভাস্কর্য শুধু সৌন্দর্যের প্রতীক নয়, ইতিহাস ও সভ্যতার পরিচয়ও বহন করে। বাংলাদেশে ভাস্কর্য পার্ক নেই। আমরা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে একটি ভাস্কর্য পার্ক স্থাপনের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি। আপাতত শিল্পকলা একাডেমির চিত্রশালা প্রাঙ্গণে সেই পার্কটি স্থাপন করা হবে। পরে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের জায়গা বরাদ্দ পেলে সেখানে তা স্থানান্তর করা হবে।’ দুই বছর অন্তর জাতীয় ভাস্কর্য প্রদর্শনী আয়োজনের ঘোষণা দিয়ে সংস্কৃতিমন্ত্রী আরও বলেন, ‘জাতীয় ভাস্কর্য প্রদর্শনী নানা কারণেই নিয়মিত আয়োজিত হয়নি। সর্বশেষ চার বছর আগে আয়োজিত হয়েছিল। আমরা আশা করছি, দুই বছর অন্তর জাতীয় প্রদর্শনী আয়োজন করতে পারব।’ ভাস্কর হামিদুজ্জামান খান বলেন, ‘প্রদর্শনীর অধিকাংশ কাজই বৈচিত্র্যময় ও সমৃদ্ধ। অত্যন্ত পরিচ্ছন্ন ও নিপুণতা রয়েছে অনেক ভাস্কর্যে। সেসব দেখলে হৃদয় প্রফুল্ল হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার কারণে ভাস্কর্য চর্চা কিছুটা স্থিমিত ছিল অনেকদিন। প্রতিবন্ধকতা পেরিয়েই আমাদের ভাস্কর্য শিল্প এগিয়ে যাচ্ছে, বিকাশ হচ্ছে। প্রাতিষ্ঠানিকভাবেও চর্চা বেড়েছে। ভাস্কর্য শিল্পের প্রসার ও বিকাশের জন্য সরকারি পর্যায়েও সহযোগিতা রয়েছে। আমরা আশাবাদী, দেশের ভাস্কর্য শিল্প আন্তর্জাতিক মানের দিকে এগিয়ে গিয়েছে।’ প্রদর্শনী ঘুরে দেখা গেল বিচিত্র সব ভাস্কর্য। খোকন চন্দ্র সরকারের ‘আমার বিশ্বাসের অন্তরালে-৯’ ভাস্বর্যকর্মটি একটি গরুর মাথা। যাতে বিভিন্ন রঙের ফুলের সঙ্গে স্থান পেয়েছে রাইফেল, গ্রেনেড, কামানের মতো বিধ্বংসী অস্ত্র। শিমুল দত্তের ‘চাপ সামলাও-৭’ নামের ভাস্বর্যে দেখা মেলে মুখে ঢুকানো পেরেক। অসীম হালদার সাগরের ‘মাদার অ্যান্ড চাইল্ড-৪’ নামক ভাস্কর্যে এক মমতার আবহ। শুধু দুটো মাথা ও মুখমণ্ডল জোড়া লাগানো। একটি বড় আরেকটি ছোট। দেখে মনে হয়, মা তার শিশুটির দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। ফারজানা ইসলাম মিলকির ‘অপেক্ষা’ শীর্ষক ভাস্বর্যটি দেখলে পুরনো দিনের কথা মনে পড়ে যাবে। কোনো এক পোড়াবাড়ির ছোট্ট বারান্দায় যেন কারও অপেক্ষায় তাকিয়ে আছে এক নারী। আমন্ত্রিত শিল্পীদের কাজের মধ্যে শামীম সিকদারের ‘বাউল’ এক অসাধারণ অনুভূতি জাগায়। একতারা হাতে এক সাধক বাউল যেন সুরে ভাসাচ্ছেন। সদ্যপ্রয়াত ভাস্কর ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণীর কাঠের তৈরি শিরোনামহীন ভাস্কর্যটি গাছের ডালে ডালে প্যাঁচানো প্রকৃতির রহস্যের কথাই মনে করিয়ে দেবে। এবারের জাতীয় ভাস্কর্য প্রদর্শনীর জন্য সারা দেশ থেকে একুশ বছর বা তদূর্ধ্ব বয়সী ১৮৭ জন শিল্পীর মোট ৩৮২টি শিল্পকর্ম প্রদর্শনীর জন্য জমা পড়ে। নির্বাচকমণ্ডলী তা থেকে বাছাই করে ৯৮ জন শিল্পীর মোট ১১৭টি শিল্পকর্ম প্রদর্শনীর জন্য নির্বাচন করেন। এছাড়া ১১ জন আমন্ত্রিত শিল্পী এবং প্রয়াত ৪ জন পথিকৃত ভাস্করের একটি করে ভাস্কর্যও এই প্রদর্শনীতে উপস্থাপিত হচ্ছে। প্রদর্শিত শিল্পকর্মগুলোর মধ্যে আমন্ত্রিত ও প্রতিযোগিতার জন্য নয় এমন শিল্পকর্ম বাদে সব শিল্পকর্ম থেকে ৫টি শিল্পকর্মকে পুরস্কৃত করা হয়েছে। জাতীয় ভাস্কর্য পুরস্কার ২০১৮ পেয়েছেন খোকন চন্দ্র সরকার। আর সম্মানসূচক পুরস্কার পেয়েছেন পলাশ সাহা, কাজী সালাউদ্দিন আহমেদ, অলোক কুমার সরকার ও শিমুল দত্ত।