Watch The Best Educational TV Live Programs & News Update Today

info@newbangla.tv


যেভাবে কমানো সম্ভব সড়ক দুর্ঘটনা

প্রতিদিন গণমাধ্যমে দেখা যায়, সড়ক দুর্ঘটনার অসংখ্য বিভৎস ছবি আর স্বজন হারানোর আহাজারি। বিশেষ করে ঈদের ছুটিতে এ রকম মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনা বেড়ে যায়। তখন স্বজন হারানো পরিবারের জন্য সান্তনার বাণী আমাদের কাছে থাকে না।

যোগাযোগ মন্ত্রণালয়, বিআরটিএসহ যোগাযোগ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা কি সদুত্তর দিতে পারবেন? অথচ সড়কপথ একটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।

দুর্ঘটনা হওয়ার কারন

১. সোজা রাস্তা ও ডিভাইডার না থাকা:
আন্তজেলা মহাসড়কে অধিকাংশ দুর্ঘটনা ঘটে খুব দ্রতবেগে চলাচল কারণে। এসব সড়কে মুখোমুখি যানবাহন চলাচল করলেও সড়কগুলো যথেষ্ট চওড়া নয় এবং কোনো ডিভাইডার নেই। যার ফলে যানবাহনগুলো
যখন পাশাপাশি চলে তখন তাদের মধ্যে নিরাপদ দূরত্ব না থাকায় মুখোমুখি সংঘর্ষ ঘটে। আর নিরাপদ দূরত্ব রাখতে গিয়ে রাস্তা ছেড়ে যানবাহন নিচে নেমে আসে। ফলে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে যায়।

২. পুরোনো ও ত্রটিপূর্ণ যানবাহন:
পুরনো যানবাহনগুলো সরিয়ে নিতে সরকার একটি পদক্ষেপ নিতে পারেন। যে যানবাহনগুলো ২৫ বছরের পুরনো সেগুলো উঠিয়ে নিতে পারেন। রাজধানীসহ সারাদেশে অসংখ্য পুরাতন ও ফিটনেসবিহীন গাড়ি চলছে। পুরনো ও ফিটনেসহীন গাড়ি দুর্ঘটনা ঘটানোর অন্যতম প্রধান কারণও বটে।

৩. ভালো সড়কের অভাব:
মহাসড়কের রাস্তা হতে হবে যুগোপযোগী, টেকসই ও উন্নতমানের কিন্তু আমাদের দেশের রাস্তাঘাটগুলো অধিকাংশ জোড়াতালি দিয়ে তৈরি করা হয়। ফলে ছয়মাসের মধ্যে সড়ক অযোগ্য হয়ে পড়ে। সড়ক নির্মাণে অধিক যতœবান ও সরকারের নজরদারি বাড়াতে হবে।
তাছাড়া স্বজনপ্রীতি ও অনিয়মের দিকেও নজর রাখা প্রয়োজন।

৪. চালকের অযোগ্যতা ও অদক্ষতা:
দেশের বেশির ভাগ দুর্ঘটনার জন্য দায়ী চালকের অদক্ষতা। দুর্ঘটনার পরও চালকদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। অধিকাংশ চালকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা সরকারের নেই। স্বাধীনতার ৪৮ বছর পরেও যোগাযোগ ব্যবস্থায় এমন বিশৃঙ্খলা সত্যি খুবই দুঃখজনক।

৫. ড্রাইভিং পেশাকে অবহেলীত রাখা:
ড্রাইভিং পেশাকে আমাদের দেশে এখনো নিম্নমানের পেশা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বিশেষ করে, বাস ও ট্রাক ড্রাইভাররা ২৪ ঘন্টার মধ্যে ১৬ থেকে ১৮ ঘণ্টাই পরিশ্রম করেন। পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন থাকতে থাকতে তাদের মধ্যে এক ধরনের অস্থিরতার তৈরি হয়। এরা শারীরিক ও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন। ফলে কাজে মনোনিবেশ করতে পারেন না। এটিও দুর্ঘটনার একটি বড় কারণ।

৬. পুরাতন ট্রাফিক সিগনাল ব্যবস্থা:
দেশে এখনও অনেক কিছু পুরাতন পদ্ধতি অনুসারে চলছে। এর মধ্যে বাংলাদেশের ট্রাফিক সিগনাল ব্যবস্থা একটা। এই ট্রাফিক সিগনালিং ব্যবস্থার আধুনিকায়ন প্রয়োজন। গতি পরিমাপক, ওজন পরিমাপক, জিপিএস প্রযুক্তি ইত্যাদির অন্তর্ভুক্তি হলে অনেক দুর্ঘটনা কমে যাবে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।

৭. বিকল্প যানবাহনের সুবিধা না থাকা:
দেশের অনেক জেলাকে রেল যোগাযোগের আওতায় আনা যায়নি। সড়কপথের বিকল্প হিসেবে রেলপথ ও নৌপথের প্রচলন ও সুযোগ সুবিধা বাড়াতে হবে। কারণ একটি নির্দিষ্ট পথে যাত্রীচাপ বেশি হলে স্বাভাবিকভাবেই অসুবিধা বাড়ে। বিকল্প যোগাযোগ ব্যবস্থা থাকলে সড়ক পথে চাপ কমে ফলে দুর্ঘটনা অনেকাংশে কমে যাবে।

৮. যুগোপযোগী আইন প্রণয়ন ও প্রয়োগের অভাব:
চলমান ট্রাফিক আইন সংশোধন ও তার যথাযথ প্রয়োগ প্রয়োজন।
রাস্তাঘাটে যেসব অবৈধ চালক, ফিটনেসহীন গাড়ি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা আটক করে তার অধিকাংশই অর্থের বিনিময়ে বৈধ হয়ে যায় বা মামলা কাগজ কলমেই থাকে। এসবের সঠিক প্রয়োগ সময়ের দাবি।

৯. ফুটওভার ব্রিজ ও জেব্রা ক্রসিং ব্যবহার করা:
পথচারিদের সচেতন হতে হবে। রাস্তা পারাপারে ফুটওভার ব্রিজ ও জেব্রা ক্রসিং ব্যবহার করতে হবে। কোনো ক্রমে শটকাট ডিভাইডার পার হওয়া চলবে না। আড়াআড়ি বা নিরাপত্তা বেষ্টনীর টপকিয়ে রাস্তা পার হবেন না। ফুটপাত ব্যবহার করতে হবে।

১০. গাড়ি চালানোর সময় ফোনে কথা বলা:
গাড়ি চালানোর সময় চালকদের ফোনে কথা বলতে দেখা যায়। যার কারণে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে থাকে। তাই অন্তত গাড়ি চালানোর সময় চালকদের ফোনে কথা না বলা উচিত। গাড়ি চালানোর সময় তারা যেন ফোন ব্যবহার না করে সে ব্যাপারে তাদের সচেতন করতে হবে।

১১. নেশাগ্রস্থ চালক:
বাংলাদেশের অধিকাংশ চালক বিভিন্ন নেশায় আসক্ত। দুর্ঘটনার এটি একটি অন্যতম কারণ। তাই তাদেরকে নেশার কুফল সম্পর্কে সচেতন করতে হবে। তাকে বুঝাতে হবে, নেশা তাকে আর্থিক, মানসিক ও শারীরিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ করছে।