Watch The Best Educational TV Live Programs & News Update Today

info@newbangla.tv


প্রাচীন মায়া সভ্যতার পুরাণ কথা ও লাতিন আমেরিকার আপন ঐতিহ্য

মনে করেন পৃথিবীর প্রথম মানুষটি আপনি! মিথে বা মিথ্যে নয়। সত্যিই ভাবতে পারেন। মনে করেন আপনি ছাড়া কোনো প্রাণীর অস্তিত্ব নেই। নির্জনতা খুন করছে আপনার নিঃশ্বাস। অন্ধকারের মধ্যে অপেক্ষা করছেন আপনি। শান্তি আর স্তব্ধতাই দুনিয়ার রাজা। আপনি-ই রাণী। এমনটা ভাবলে তেমন ক্ষতি নেই। আলো আসবেই। কারণ স্রষ্টা তেপেয়ু, গুকুমাৎস বিশাল শূন্যতাকে খান খান করে সবুজ আর নীল পালকে আবির্ভূত হবেন। তারপর আপন মনে হঠাৎ আপনি ‘পৃথিবী’ বলে ডাক দিলেন কাউকে। ব্যাস। এভাবেই পড়তে পড়তে আমিও প্রথম প্রাণী বা পাইন গাছ কিংবা স্রষ্টার স্বাদ অনুভব করবেন।

পহেলা বৈশাখ শুরু। সৌজন্য শুভাচ্ছে আমি তেমন জানাতে পারি না। কিন্তু টি এস এলিয়টের ভাষায় ‘এপ্রিল নিষ্ঠুরতম মাস’। করোনাও কি তাই মনে করিয়ে দেয়নি? তবু সময়গুলো উদযাপন করতেই হবে। সে কারণে শুভেচ্ছার বদলে একটি বইয়ের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে চাই। যা অমঙ্গলকে দূর করে মঙ্গলের আলোকে ভরে তুলতে চাই এই সুন্দর পৃথিবী।

পোপোল্ বু একটি মহান পুরাণের বই। মাইয়া সভ্যতার রূপকথা। লাতিন আমেরিকার আপন ঐতিহ্য। পোপোল্ বু আপন ভাষায় অনুবাদ করেছেন মানবেন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়। বইমেলা থেকে কিনেছে কবি নকিব ‍মুকশি। প্রিয় অনুবাদের বই অপাঠ্য থাকবে কেন ভেবেই পহেলা বৈশাখে হাতে নিলাম। ঘরবন্দী আমার মন্দ লাগে না। প্রার্থনা, পাঠ, আর গান ও সুরের মোহে ডুবে থাকাই ভালো।

মাইয়া সভ্যতার পুরাণের কারণে আরো আগ্রহ তৈরি হলো। প্রথম পাতায় লেখকের ভূমিকা পড়ে নেশা আরো বেড়ে গেল। কারণ উপনিবেশিক শাসনের ফলে এই বইটা অনুবাদ হতে দেরি হয়েছে বলে অনুবাদ যে অনুমান প্রকাশ করেছেন তা পাঠের শেষে সবার কাছে পরিস্কার হয়ে যাবে। মাত্র ৫৬ পৃষ্টার বই। দুপুরের পর হাতে নিয়ে রাতেই শেষ। পাঠ করতে করতে শিহরিত হয়েছি। বিস্মিত হয়েছি তার চেয়েও বেশি।

বেশ কিছু চরিত্র চেনা চেনা মনে হয়। শুকসপ্তক। তার বউ। তার দুই ছেলে সিপাকনা, কাব্রাকান। তাদের বিশেষ ক্ষমতা থাকে। আর দানবদের বা মরণদেবতার পতন ঘটানো সেই দুই যজন ভাই। ইনাফু আর এসলান। এখানে আদম-হাওয়া আর হাবিল-কাবিলের একটা গন্ধ পাওয়া যায়। যদি আপনার পৃথিবী সৃষ্টির কাহিনী জানা থাকে। পুরাণ কি রূপকথা নাকি তাতে সত্য আর মিথের মশলা মিশিয়ে পরিবেশন করা হয়? এই প্রশ্ন আমি বহুবার নিজেকে করেছি। রামায়ণ মহাভারত পড়েও কি তাই মনে হয় আপনার?

এই বইটির মূল প্রতিপাত্য বিষয় হলো। রাজার ক্ষমতাকে প্রজাদের মঙ্গলে ব্যবহৃত না হয়ে উল্টো তাদেরকে শোষণ ও শাসনের নামে অত্যাচার যখন সীমা ছাড়িয়ে যায় তখন প্রকৃত নায়ক সময় সৃষ্টি করে দেন। তারাই সেই অপশক্তিকে মানবিক ক্ষমতা বলে সেই অপশক্তিকে অমঙ্গলকে পৃথিবী থেকে চিরতরে বিদায় করে দেন। ফলে সততা, নৈতিকতা ও সত্যের জয় দেখতে শেষ দৃশ্যে আমাদের হাজির হতেই হয়। কারণ তখন বোঝা যায় উপনিবেশিক শাসন আমাদের চিন্তার জমিনকে কতটা ক্ষত করেছে। কিন্তু মঙ্গলের জয়গানে আমাদের প্রাণের বায়ু সত্যিই শান্তি আর স্বস্তির সুরে ভরে যায়। তখন রবীন্দ্রনাথের ভাষায় বলতে ইচ্ছে করে ‘মুছে যাক গ্নানি, ঘুচে যাক জরা, অগ্নিস্নানে শুচি হোক ধরা’।

রিভিউ লিখেছেন – পলিয়ার ওয়াহিদ