Watch The Best Educational TV Live Programs & News Update Today

info@newbangla.tv


পানাম নগর ভ্রমণ

নগরজীবনে নানা ব্যস্ততার মধ্যে আপনি বিষিয়ে উঠেছেন। তাই একটু অবসরে নগরের বাইরে ঘুরতে চান।ঘুরে আসুন হারিয়ে যাওয়া শহর পানাম নগর । যে কোনো ছুটিতে চলে যেতে পারেন সোনারগাঁ। সোনারগাঁ লোক ও কারুশিল্প জাদুঘর থেকে মাত্র আধা কিলোমিটার দূরে এই পানামনগর, ঈশা খাঁর নগর। একসময় ছিল তাঁত ব্যবসায়ীদের আবাসস্থল, বাংলার মসলিন ঐতিহ্যের কেন্দ্রবিন্দু।

পানামনগর

২০ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে গড়ে ওঠা এই নগরী তৎকালীন অন্য সব নগর থেকে ছিল বেশি আকর্ষণীয়। এখানে শুধু যে দালানকোঠা আছে, তা কিন্তু নয়। মসজিদ, মন্দির, কূপ, সরাইখানা, পঞ্চপীরের মাজার এমন আরো অনেক কিছু চোখে পড়বে পানামে এলে। বিকেলের আলোতে পুরোনো দালানগুলো যেন ঝলমলিয়ে ওঠে। সন্ধ্যার আগ পর্যন্তই এটা নগরী দর্শকদের জন্য উন্মুক্ত থাকে। পানামনগরীর বিভিন্ন দালানের নির্মাণশৈলীতেও ভিন্নতা লক্ষ করা যায়। ব্যবসায়ী আর জমিদারদের বসবাসের এই নগরীর প্রতিটি দালান অপূর্ব কারুকার্যমণ্ডিত।

নগরীকে চিরে দুই ভাগ করে চলে যাওয়া পাঁচ মিটার প্রশস্ত ও ৬০০ মিটার দীর্ঘ একটি সড়কের দুই পাশে একতলা, দোতলা ও তিনতলা মিলিয়ে রয়েছে প্রায় ৫২টি ভবন। সড়কের উত্তর পাশে আছে ৩১টি ভবন এবং দক্ষিণ পাশে আছে ২১টি ভবন। ওয়ার্ল্ড মনুমেন্ট ফান্ড ২০০৬ সালে পানাম নগরকে বিশ্বের ধ্বংসপ্রায় ১০০টি ঐতিহাসিক স্থাপনার তালিকায় স্থান দেয়। ভবনগুলো ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় নির্দেশাবলি অনুযায়ী কোনোটারই ওপরে ওঠা নিষেধ। বড় নগর, খাস নগর, পানাম নগর -প্রাচীন সোনারগাঁর এই তিন নগরের মধ্যে পানাম ছিলো সবচেয়ে আকর্ষণীয়।

‘হারিয়ে যাওয়া শহর’ হিসাবে পরিচিত পানাম নগর বা পানাম সিটি বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার পার্শবর্তী নারায়ণগঞ্জ জেলার মোগরাপাড়া পয়েন্টে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের উত্তরে প্রায় ২.৫ কিলোমিটার অদূরে সোনারগাঁও থানার একটি নিকটতম শহর।

সোনারগাঁ

আজ থেকে প্রায় ৪৫০ বছর আগে বার ভূইয়ার দলপতি ঈশা খাঁ ১৫ শতকে বাংলার প্রথম রাজধানী স্থাপন করেছিলেন সোনারগাঁওতে। সোনারগাঁর ২০ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে এই নগরী গড়ে ওঠে। ঈসা খাঁর যাতায়াত ছিল এই নগরীতে। সেই সময়টাতেই অর্থাৎ সুলতানি আমলে বাংলার শিল্প ও সংস্কৃতি বিকাশ লাভ করে। পূর্বে মেঘনা আর পশ্চিমে শীতলক্ষ্যা নদীপথে বিলেত থেকে আসতো বিলাতি থানকাপড়, দেশ থেকে যেতো মসলিন। শীতলক্ষ্যা আর মেঘনার ঘাটে প্রতিদিনই ভিড়তো বড় বড় পালতোলা নৌকা। প্রায় ঐ সময়েই ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বাণিজ্যিক কার্যক্রম ও চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের ফলে ইউরোপীয় অনুপ্রেরণায় নতুন ঔপনিবেশিক স্থাপত্যরীতিতে গড়ে উঠে পানাম নগরী। ইংরেজরা এখানে নীলের বাণিজ্যকেন্দ্র খুলে বসে। সেই সাথে মসলিনের বাজার দখল করে নেয় নীল বাণিজ্য।

পানামের অবকাঠামো

পানাম নগরে ঢুকেই চোখে পড়বে একটি সরু রাস্তার ধারে সারি সারি পুরনো দালান। কোনটা দোতলা কোনটা আবার এক তলা। বাড়িগুলোর স্থাপত্য নিদর্শন দেখে বোঝা যায় এখানে ধনী বণিক শ্রেণীর লোকেরা বসবাস করতেন। বাড়ীগুলোতে মোঘল ও গ্রীক স্থাপত্যশৈলীর মিশ্রণ দেখা যায় এবং প্রতিটি বাড়ির কারুকাজ স্বতন্ত্র। কারুকাজ, রঙের ব্যবহার এবং নির্মাণকৌশলের দিক থেকে নতুন নতুন উদ্ভাবনী কৌশলের প্রমাণ পাওয়া যায় এখানে। প্রায় প্রতিটি বাড়ি তৈরিতে ব্যবহার করা হয়েছে ঢালাই লোহার তৈরি ব্রাকেট।

জানালায় ব্যবহার করা হয়েছে লোহার গ্রিল এবং ঘরে বায়ু চলাচলের জন্য ভেন্টিলেটর ব্যবহার করা হয়েছে। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হল বাড়িগুলোতে কাস্ট আয়রনের নিখুঁত কাজ আছে, এবং ইউরোপে ব্যবহৃত কাস্ট আয়রনের কাজের সাথে এই কাজের অনেক মিল লক্ষ্য করা যায়। এছাড়াও মেঝেতে লাল, সাদা, কালো মোজাইকের কারুকাজ লক্ষ্যনীয়। নগরীর ভিতরে আবাসিক ভবন ছাড়াও আছে মসজিদ, মন্দির, গির্জা, মঠ, গোসলখানা, নাচঘর, পান্থশালা, চিত্রশালা, খাজাঞ্চিখানা, দরবার কক্ষ, গুপ্ত পথ, বিচারালয়, পুরনো জাদুঘর। এছাড়া আছে ৪০০ বছরের পুরনো টাকশাল বাড়ি।

পানাম নগরে ঢুকেই আপনি হারিয়ে যাবেন কোন এক অতীতে। এই শান্ত সুনিবিড় গ্রামে কালের সাক্ষী হয়ে দাড়িয়ে আছে এই ভবনগুলো। সংস্কারের অভাবে ভবনগুলো জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। প্রায় প্রতিটি বাড়িতে লাগানো আছে ঝুঁকিপূর্ণ ভবন। ভবনের জানালাগুলো ইটের গাঁথুনি দিয়ে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। পানাম পুলের কাছে দুলালপুর সড়কের খুব কাছেই রয়েছে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি কর্তৃক তৈরিকৃত নীলকুঠি। নীল চাষের নির্মম ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে রয়েছে পানামের নীলকুঠি। নিরাপদ পানির জন্য প্রতিটি বাড়িতেই কুয়া বা কুপ ছিল। নিখুঁত পরিকল্পনা মাফিক পানাম নগর তৈরি করা হয়েছিল।

পানামের উল্লেখযোগ্য ঘটনা

পানাম নগরের সৌন্দর্যে অনেকে মুগ্ধ হয়েছিলেন। তখন পারস্যের বিখ্যাত কবি ছিলেন কবি হাফিজ। বাংলার সুলতান গিয়াসউদ্দিন আযম শাহ কবিকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। কবি হাফিজ সেই আমন্ত্রণ রক্ষা করতে পারেননি। তাই তিনি উপহার স্বরূপ একটি গজল লিখে পাঠিয়েছিলেন। পরবর্তীতে ফরাসি একজন পর্যটক সোনারগাঁয়ে এসেছিলেন। তিনি পানাম নগর দেখে মুগ্ধ হয়েছিলেন।