মেয়েলী রোগের ঘরোয়া ওষুধ
ধাতু, ত্বক, ব্রণ, পেটে ব্যথা ও মাথা ধরা সমস্যা সহ নানান রোগের সমাধান একটি মাত্র শাকে। প্রিয় দর্শক, জানেন কি এই শাকটির নাম কি? এই শাকটি হল নটে শাক।
নটে শাক সাধারণত গ্রামের পুকুর পাড়ে, জমির আলে, আবার কখনো রাস্তার ধারে হঠাৎ গজিয়ে ওঠে। এই শাক অনেকের খুব পছন্দের। বিশেষ করে ভাজি বা চচ্চড়ি রান্না সুস্বাদু হয়। স্বাদে ও গুণে অনন্য নটে শাকের কথা ছোটবেলায় দাদির মুখে শুনেছি। ‘নটে গাছটি মুড়ালো, আমার গল্প ফুরালো’। কিন্তু নটে শাকের এমন অদ্ভুত কিছু গুণ আছে ,যা শুনে মনে হবে, নটে শাকের আসল গল্প এবার শুরু হলো। তাই আজকের আলোচনার বিষয় ‘নটে শাক’।
পরিচিতি ও ঔষুধি গুণ
নটে শাক গুল্ম শ্রেণির উদ্ভিদ। এটা ওষুধি শাক হিশেবে খুব পরিচিত। এর বৈজ্ঞানিক নাম ‘আমা-রান-থুস স্পেনিওয়াস’ (Amaranthus spinosus)। পাতা ছোট ও গোল আকৃতির। বাংলাদেশের সর্বত্র নটে শাক দেখা যায়। অঞ্চল ভেদে একে গোল-নটে বা কাঁটা নটেও বলা হয়। নটে শাকে উন্নত মানের পুষ্টি রয়েছে। যেমন, প্রোটিন, ভিটামিন-এ, ভিটামিন-বি (সিক্স), ভিটামিন-সি, ভিটামিন-কে। এছাড়া খনিজ উপাদানের মধ্যে ক্যালসিয়াম, আইরন, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস, পটাশিয়াম, সোডিয়াম, জিঙ্ক, কপার, ম্যাঙ্গানিজ।
১০টি রোগ থেকে মুক্তি
এলার্জি ও চুলকানি: যারা এলার্জি ও চুলকানিজনিত কারণে দিশেহারা তাদের জন্য সু-খবর।যদি কোনো খাবার খাওয়ার দরুণ বা যে কোনো কারণে রক্তের দোষ ঘটে এবং সেই কারণে এলার্জি ও চুলকানি হয়। তাহলে নিয়মিত ১ মাস নটে শাক ভাজা খেলে উপকার পাবেন।
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে : বর্তমান সময়ে কোষ্ঠকাঠিন্য নেই এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া কঠিন। গ্রামের তুলনায় শহরের মানুষ এ রোগে বেশি ভোগেন। ভেজাল তেল ও তেল জাতীয় খাবার গ্রহণের কারণে এ রোগ বেশি হয়ে থাকে। যিনি কোষ্ঠকাঠিন্যে ভূগছেন তিনি নিয়মিত নটে শাক খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি পাবেন।
গনোরিয়া সারাতে: নটে শাকের শিকড় তুলে, তা সামান্য পানি দিয়ে, বেটে সম্পূর্ণ রস, আধা কাপ ঠাণ্ডা পানিতে মিশিয়ে, দেড় চা-চামচ চিনি বা মিছরির গুঁড়া কিংবা সম-পরিমাণ মধু মিশিয়ে খেলে, গনোরিয়া রোগে সুফল পাবেন। এটা মিনিমাম এক মাস যাবৎ না খেলে উপকার বোঝা যাবে না। এছাড়া যেখোনে-সেখানে প্রসাব করা ও অবৈধ যৌন সম্পর্ক থেকে দূরে থাকুন।
মেয়েলী অসুখে: মেয়েলী নানারকম অসুখে নটে শাক খুব উপকারি। নটে শাককে মেয়েলী রোগের ঘরোয়া ওষুধ বলা হয়। যন্ত্রণাদায়ক ধাতুরোগ, যৌনব্যাধি ও প্রস্বাবের অসুখে শরীর যদি ফুলে ওঠে ও ব্যথা করে তাহলে নটে শাক খেলে সেই যন্ত্রণা থেকে মুক্তি মেলে।
মায়েদের জন্য উপকার : যে সব মায়েরা বাচ্চাদের বুকের দুধ খাওয়ান, তারা নটে শাক ভাজা খেলে সুফল পাবেন। নটে শাক প্রতিদিন ভাত দিয়ে খেলে, বুকের দুধ বৃদ্ধি পাবে। আর যারা মা হতে চলেছেন বা নতুন মা হয়েছেন, সে সব মায়েরা নটে শাক খেলে, শরীরিক দুর্বলতা কেটে শক্তি ফিরে পাবেন।
ত্বক ও ব্রণের সমস্যা: আগুনে পোড়া ঘা বা যদি ব্রণ হয় তাহলে নটে শাকের রস ৭ দিন লাগালে তা ভালো হয়ে যায়। এই উপায়টি খুব সহজ তাই প্রয়োগ করে দেখুন। আপনার ত্বকে যদি এ রকম কোনো সমস্যা থাকে, সেটা দূর হয়ে যাবে।
পেটে ব্যথা ও মাথা ধরা: রোজ একবার করে নটে গাছের মূলের রস খেলে পেটে ব্যথায় দারুণ উপকার পাওয়া যায়। যাদের মাথা ব্যথা আছে তারা নটে শাক ও গোলমরিচ বেটে সামান্য পানি দিয়ে কপালে প্রলেপ দিলে, মাথা ধরা বা কপাল কামড়ানো সেরে যাবে।
আগুনে পুড়লে: নটে গাছের শিকড় ও পাতা স্টিলের পাত্রে পানি দিয়ে সেদ্ধ করতে হবে। পানি ঠান্ডা হলে পরিস্কার পাতলা কাপড়ে ছেঁকে, পোড়া ঘায়ের ওপর পাতলা কাপড় বসিয়ে ভিজিয়ে দিতে হবে। এভাবে কয়েক দিন চালিয়ে যেতে পারলে আগুনে পোড়ার কোনো ব্যথা ও দাগ থাকবে না।
চর্মরোগ ও খোস-পাঁচড়ায়: নটে গাছের শিকড়-কাণ্ড-পাতা ভালোভাবে শুকিয়ে, তা আগুনে পুড়িয়ে, সে ছাই নারকেল তেলের সঙ্গে মিশিয়ে, খোস-পাঁচড়ায় লাগালে যাবতীয় চর্মরোগ ভালো হয়ে যায়। এছাড়া নটে গাছের কচি পাতা বেটে ফোঁড়া বা বাগীতে প্রলেপ দিলে দুদিনের মধ্যেই ফোঁড়া ফেটে যাবে।
আমাশয় সারাতে:নটে শাকের শিকড়ের সঙ্গে যদি ৪-৫ টি গোলমরিচ বেঁটে খাওয়া হয় তবে কয়েক দিনের মধ্যে আমাশয় ভালো হয়ে যায়।